,

নবীগঞ্জের ৯০টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপুজা শুরু হবে আগামীকাল

উত্তম কুমার পাল হিমেল/জাবেদ ইকবাল তালুকদার : নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৮৪টি ও পৌরসভায় ৬টি মিলে ৯০টি পূজার মন্ডপে বছর ঘুরে আবারো হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে জোরেশোরে শুরু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ষষ্টীবিহিত পুজার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা। আনন্দময়ীর আগমনে ধনী-গরিব আবালবৃদ্ধ সকল পুজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে যেন আনন্দের কমতি নেই কোন অংশেই। বাঙ্গালী হিন্দুদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজার আগমনী শোর সকলের মাঝে বিরাজ করছে। প্রতিটি পুজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজ সম্পাদন করার জন্য দিনরাত নিরবিছিন্নভাবে কাজ করে প্রতিমা তৈরীর কাজ ইতিমধ্যে শেষ করছেন নিয়োজিত প্রতিমা শিল্পীরা। প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ করে রং তুলির আছড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজও শেষ করছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিমা রঙ্গেও চিত্রশিল্পীরা। তারপর মন্ডপ সাজসজ্জার কাজ শেষ করলেই উৎসবের আমেজে মেতে উঠবেন সবাই। তাই শারদীয় এ পূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল পূজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে বিপুল আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনা ঘাটতি নেই বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক লোকজনের মাঝেও। তবে বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারনে এ বছর উৎসবের আমেজ অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পূজারীবৃন্দ। তবে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
শাস্ত্রমতে জানাযায়, এ বছর দেবীর দোলায় আগমন ফল মড়ক এবং দেবীর গজে গমন করবেন ফল শষ্যপূর্ণা বসুন্ধরা। সমাজের সকল আসুরিক শক্তির বিনাশ সাধন করে সর্বত্র শান্তি স্থাপনের মূলমন্ত্রই হলো শারদীয় দুর্গাপূজার মুল উদ্দেশ্য। সারা দেশের ন্যায় এ বছর নবীগঞ্জ ১৩টি ইউনিয়নে ৮৪টি এবং পৌরসভায় ৬টি মন্ডপে সাড়ম্বরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় এ বছর সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ ও আনসার বাহিনীর লোক নিয়মিত সময় না থাকায় স্বেচ্ছাসেবকরাই প্রতিটি পূজামন্ডপে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া উপজেলায় ৯০টি পুজামন্ডপের জন্য নবীগঞ্জ থানা পুলিশের ৯টি মোবাইল টীম সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। ইতিমধ্যে গত ১২ অক্টোবর নবীগঞ্জ উপজেলা ও থানা প্রশাসন শারদীয় দুর্গাপূজায় যথাযথভাবে শান্তি শৃংখলা বজার রাখতে বিশেষ আইন শৃংখলা সভাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক উত্তম কুমার পাল হিমেল বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলার ৯০টি পূজা মন্ডপে সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা সাড়ম্বরে পালনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। কিছু ঝুকিপূর্ন মন্ডপসহ সবকটি মন্ডপেই ইতিমধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। দুর্গাপূজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পাদনের জন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সহযোগীতা কামনা করি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি আজিজুর রহমানের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ব্যতিক্রমভাবে পূজা উদযাপন হবে। পূজায় যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে আমরা সেই দিকে খেয়াল করব। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেব। থানার অফিসারদের নিয়ে আমরা বসে শান্তি শৃঙ্খল ভাবে পূজা উদযাপনের ব্যাপারে আলোচনা করছি। সবাইকে সরকারি বিধি মেনে পূজা উদযাপন করার জন্যও তিনি আহবান করেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহি উদ্দিন বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে পালনের জন্য সরকার ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার জন্য ইতিমধ্যে বিশেষ আইনশৃংখলা সভা ও করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বলেন, হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে পালনে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। ধর্ম যার যার উৎসবের আনন্দ সবার এই শ্লোগানে আমরা সবাই উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করব।
নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ বলেন, দেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা পালনে সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাই। আগামীকাল ২২ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার ষষ্ঠী পুজার মধ্য দিয়ে নবীগঞ্জের সকল পুজা মন্ডগুলোতে ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দূর্গাপূজা শুরু হবে এবং ২৬ অক্টোবর সোমবার মহা দশমীবিহিত পুজার মাধ্যমে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজা সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ পূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ন্যায় নবীগঞ্জের সকল পূজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে সর্বত্র যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছে। তবে বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে এ বছর উৎসবের আমেজ অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পুজারীবৃন্দ। তবে পূজারীদের বিশ^াস অসুর বিনাশিনী দেবী দুর্গাপূজার মাধ্যমে সমাজের সকল মহামারী ভাইরাস দুর হয়ে আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।


     এই বিভাগের আরো খবর